পেহেলগামের দর্শনীয় স্থান সমূহ

পেহেলগামের দর্শনীয় স্থান সমূহ



ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এলাকার অনন্তনাগ জেলার এক পর্যটন শহর। এটা শ্রীনগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে লিডার নদীর তীরে অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা ৭২,০০ ফুট। এটা খুবই জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট এবং হিল স্টেশন। নদী উপত্যকা শোভিত, নয়ানাভিরাম অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পেহেলগাম। আবার অনেকেই এটা কে এশিয়া মহাদেশের সুইজারল্যান্ড নামে চিনে। আসুন আমরা শুনি পেহেলগাম ভ্রমণ কাহিনী।


পেহেলগামের দর্শনীয় স্থান সমূহ-


পেহেলগামে দেখার মতো বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর স্থান রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: লিডার নদী, মিনি সুইজারল্যান্ড খ্যাত বাইসারন, বেতাব ভ্যালি, পেহেলগাম ভ্যালি, তুলিয়ান ভ্যালি, আরু ভ্যালি, কাশ্মীর ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট, পেহেলগাম ভিউপয়েন্ট, চন্দনওয়ারী, ধাবিয়ান, ওয়াটারফল, কোলাহাই হিমবাহ, মালেশ্বর মন্দির ইত্যাদি। পেহেলগাম এর সবগুলো স্পট দেখতে গেলে ২-৩ দিন সময় লেগে যাবে। হাতে সময় কম থাকায় আমরা সবগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারিনি। 


লিডার নদী


সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমি পুরোপুরি ভাবে অবাক হয়ে গিয়েছি। সামনের ভিউ অসাধারণ। কটেজের সামনে ছোট একটা বাগান রয়েছে সেখানে বসে থেকে চা নাস্তা খাওয়া যাবে। বাগানের নিচেই লিডার নদী যার পানি অনেক স্বচ্ছ নীল। নদীতে নামার জন্য সিঁড়ি দেওয়া আছে। আমরা যেই কটেজে উঠেছে সেটা অনেক সুন্দর দেখতে। তিনতলা কর্টেজ এর ফ্লোর, সিঁড়ি সবকিছুর ডেকোরেশন কাঠ দিয়ে করা। পরো কর্টেজে আমরা ছাড়া কেউ নেই।


রাতে আমরা সোনমার্গ থেকে পেহেলগাম এসেছি। আমরা এখানে লিডার নদীর সাথেই একটা কর্টেজে উঠেছি। লিডার কশ্মীরের একটি পাহাড়ী নদী। এটি কোলাহল হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে জেলায় নদীতে গিয়ে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কি.মি। এই লিডার নদীতেই পেহেলগাম। আমরা রাতে এসেছি তাই আশেপাশে কিছু দেখতে পাই নি। শুধু লিডার নদীর তীব্র গর্জন শুনেছি। 


এবার আমরা ব্রাশ পেস্ট নিয়ে নদীতে চলে গেলাম। নদী একটু দুই ভাগ হয়ে আবার আমাদের কটেজে এসেই মিশে গেছে। নদীর কনকনে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে আমারা ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এখানে থেকে নদীর গর্জন আরো বেশি শোনা যায়। ওখানে কিছু ছবি তুলে রুমে এসে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। কর্টেজ কতৃপক্ষ আমাদের সকালের নাস্তা খেতে দিলো। নাস্তা খেয়ে সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নেমে আসলাম। 


ঘোড়ার পিঠে চড়ে চড়া


নাস্তা খেয়ে এসেই দেখি আমাদের ঘোড়া রেডি। ছয় জনের ছয় ঘোড়া। সাইজে বেশ বড়। প্রতি ঘোড়া সারাদিনের জন্য ১৫০০ রুপি। রাতে কর্টেজ কতৃপক্ষকে বলে রেখেছিলাম তাই তারা ঘোড়া ঠিক করে দিয়েছে। এই ঘোড়ার দাম নিয়ে অনেক কিছু হয়। আপনারা দরদাম করে ঠিক করে নিবেন। আজ সারাদিন আমরা এই ঘোড়া দিয়েই পেহেলগাম ঘোড়াঘুড়ি করবো। পেহেলগাম ভ্রমনের এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।


পেহেলগাম ভ্রমনের ৬ পেয়েন্ট আমাদের হাতে যেহুতু সময় কম তাই ৬-৭ টা স্পট ঘোরাঘুরি করবো। এই স্পটগুলোর উপর ঘোড়ার দাম নির্ভর করে এবং এটা সিজন অনুযায়ী দাম কম বেশি হতে পারে। যাইহোক পেহেলগাম ৬ স্পট ঘোরার জন্য ১৫০০ রুপি দিয়ে ঘোড়া ভাড়া করলাম।


আমাদের স্পটগুলো হলো: কশ্মীর ভিউ পয়েন্ট, পেহেলগাম ভিউপয়েন্ট, বাইসারান, ধাবিয়ান, ওয়াটারফল, কানিমার্গ। ছয় ঘোড়ার সাথে দুই জন সহযোগী পাবেন। আগের দিন ঘোড়ায় চড়ে আমরা বেশ অভিজ্ঞ হয়েছি। তবে যথারিতি খাদেম ভাই আজ ও ভয়ে আছে। আমরা ওনাকে অভয় দিলাম এবং একজন এসিস্ট্যান্ট কে সবসময় ওনার আশেপাশে থাকতে বললাম। সকাল ৯.৩০ মিনিটে আমরা সবাই পেহেলগাম ভ্রমনে বের হলাম। 


আমরা প্রথমে আসলাম পেহেলগাম ভিউপয়েন্ট। এখানে থেকে পেহেলগাম পুরোটা দেখা যায়। চারিদিকে সবকিছু সবুজ। মাঝে মাঝে কিছু ঘরবাড়ি। নদীটা দেখতে এক কথায় চমৎকার। 


আমার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে এগিয়ে চলেছি। সারি সারি পাইনের বাগান, নিচে লিডার নদী। কখনো কখনো আমরা বনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছি। ছোটবেলায় দেখতাম পাইনের বনের ভিতর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে তীব্র বেগে ছুটে চলছে রবিন হুড। তখন নিজেকে রবিন হুডের মতোই মনে হচ্ছিল। 


এরপর আসলাম কশ্মীর ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে পুরো কশ্মীর ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট পুরোটা দেখা যায়। চারপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়, মাঝখানে সবুজ সমতল ভূমি। আগে যখন রাস্তা ছিল না তখন নাকি লোকজন ডানপাশের এই উঁচু পাহাড় বয়ে শ্রীনগর যেত। এমনটাই জানালেন দুই এসিস্ট্যান্ট। এখানে কিছু ছবি তুলে আবার যেতে শুরু করলাম। 


মিনি সুইজারল্যান্ড বা বাইসারান


এবার আমরা চলে এলাম বাইসারান অর্থাৎ যাকে আমরা এশিয়া মহাদেশের মিনি সুইজারল্যান্ড বলে চিনি। আমরা ছয়জন টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। ভিতরে ঢুকে আমরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এতো দিন ক্যালেন্ডারে যে ছবিগুলো দেখতাম একদম অবিকল সেরকম দৃশ্য। ঘন পাইনের বনের ভিতর অনেক বড় ফাকা জায়গা।


এখানে তেমন বেশি হকার নেই। যারা আছে তারা কাশ্মীরের জামাকাপড় বিক্রি করে। তাদের মধ্যে একজন আমাদের বাজরাঙ্গী ভাইজান মুভিতে সালমান খান যে সাদাকালো পোশাক পড়েছিল সেটা নেওয়া জন্য বলে কিন্তু আমরা নিলাম না। 


যাইহোক বাইসারান অর্থাৎ মিনি সুইজারল্যান্ড দেখতে অনেক সুন্দর। পুরাটাই সবুজ। জায়গাটা পুরো সমতল নয়। মাঝে মাঝে হালকা কিছু কার্ভ আছে। দূরের পাহাড়ের মাথায় সাদা সাদা বরফ জমে আছে। সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ে সাধারণত এরকম দৃশ্য দেখা যায়। আর এজন্যই হয়তো একে এশিয়ার মিনি সুইজারল্যান্ড বলে। 


জিপ লাইনিং


এখানে জিপ লাইনিং করার ব্যবস্থা আছে। দুই পাশে দুই গাছের সাথে একটা সরু তার বাঁধা, মানুষ কে ঐ তারের সাথে আটকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর তারা তাদের দেহের ভারে সমান তালে এগিয়ে চলে। আমরা দামাদামি করে ২০০ রুপি দিয়ে এটার ও টিকেট কেটে ফেলি। সেরকম উঁচু না তবে আপনি অনেক আনন্দ পাবেন। আমার লাইফে এটাই প্রথম জিপ লাইনিং করা। 


জবিং


এখানে জবিং খেলা রায়। বিশাল এক বলের মধ্যে দুজন কে রেখে ঢালু জমিতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ওটা গড়িয়ে গড়িয়ে চলতে থাকে। অন্যরা কেউ সাহস পেল না আমি এবং আজিজ ভাই ওঠে পড়লাম। ১৫০ রুপি টিকেট মূল্য। প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে মজা পাইছি। তবে এখানে ওঠার জন্য ৮০ কে.জি ওজনের কম হতে হয়।


পেহেলগাম ভ্রমন শেষে


আর এভাবেই শেষ হয় আমাদের পেহেলগাম ভ্রমন। পেহেলগাম ভ্রমন শেষে আমরা শ্রীনগর চলে যাই। আজকে রাতে সেখানেই থাকার কথা আছে। 


অন্য পর্বগুলো ও দেখে নিতে পারেন। আশাকরি আপনাদের ভাল লাগবে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। দেখা হবে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে।

            


                            Next Step

Post a Comment

Previous Post Next Post